ব্রেকিং:
হামাসের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত দেশজুড়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর দেশজুড়ে যেসব কার্যালয়-স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর-আগুন ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে প্রতিটি হত্যার বিচার হবে, একটু সময় দিন: সেনাপ্রধান ১১টার মধ্যে শহীদ মিনারে জড়ো হতে বললেন আসিফ মাহমুদ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শহীদ মিনারে স্লোগান দিচ্ছেন রিকশাচালকেরাও শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীতে বাস চাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের গেজেট প্রকাশ পুরো আগস্ট কালো ব্যাচ পরতে হবে শিক্ষক-কর্মচারীদের
  • রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শান্তিরক্ষী বাহিনীর দীর্ঘদিনের সুনাম কেন টার্গেট হচ্ছে?

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৫ জুন ২০২৪  

গত ২৫ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের এসকাপের ৮০তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান আরও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন। যদিও তিনি এ ভাষণটি দিয়েছেন জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনে (এসকাপ), কিন্তু সমগ্র বিশ্বকে সামনে রেখেই তিনি বক্তব্য রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি দিক স্পষ্ট। প্রথমত, তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট ও জোরালভাবে যুদ্ধকে ‘না’ বলার কথা বলেছেন। কারণ যুদ্ধ মানেই হচ্ছে ধ্বংস, সহিংসতা, আগ্রাসন। এ যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব একটি চরম সংকটে উপনীত হয়েছে। শেখ হাসিনা যথার্থই যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে জোরাল বক্তব্য রেখেছেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত প্রায় এক দশক ধরে বিশ্বশান্তি ও শৃঙ্খলার পক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রতিনিয়ত বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। বিগত দুই বছর জাতিসংঘে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সরাসরি আহ্বান জানান। এমনকি তিনি যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব উল্লেখ করে এ বছরেও অনেক ফোরামে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা, যুদ্ধের কারণে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, মানবতার পতন এবং যুদ্ধের দরুন যে ধরনের অবিশ্বাস ও বৈরিতা তৈরি হয়েছে- সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ফোরামে শান্তির পক্ষে বক্তব্য রাখছেন। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের এই অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা বাহিনী (১৯৮৮-২০২৪) জাতিসংঘের অধীনে ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর প্রায় ৭ হাজার সদস্য শান্তি বজায় রাখার জন্য বিশ্বজুড়ে ৯টি মিশনে কাজ করছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মোতায়েনে সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী রাষ্ট্র হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে।

১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় একটি মেডিকেল মিশন পাঠান শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে। জাতিসংঘ ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউএনআইএমওজি) মিশন প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ অপারেশনে ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠায়। ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা, সোমালিয়া এবং বসনিয়ায় সর্বাধিক আলোচিত শান্তি মিশনে নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড গ্রুপ ১৯৯৪ সালের গণহত্যার সময় রুয়ান্ডায় অবস্থান করে। প্রায় ১০০ দিনের গৃহযুদ্ধে প্রায় ৮ লাখ মানুষ মারা যায়। সেই মিশনে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে বেলজিয়ানসহ আফ্রো-ইউরোপীয় ব্যাটালিয়নগুলো দ্রুত চলে যায় এবং তাদের অপারেশন স্থগিত করে; কিন্তু বাংলাদেশি সেনারা বীরত্বের সঙ্গে মিশন অঞ্চলে থেকে যায়। ফলে গণহত্যায় মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। বাংলাদেশি সেনাদের সাহসিকতা ও দক্ষতা দেখে সবাই বিস্মিত হয়। মার্কিন সেনারা সোমালিয়া থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন প্রত্যাহার করার সময় তাদের শেষকর্মী সোমালিয়া ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশি সেনাদের তাদের সঙ্গে থাকতে বলেছিল।

এ ছাড়া অসংখ্য উল্লেখযোগ্য মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর অসাধারণ অবদান রয়েছে। যেসব অবদানের কথা এই লেখায় সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো- ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’। কারণ আমরা এমন একটি দেশ যারা শান্তিকে মূল্য দেয়। সিয়েরা লিওন বাংলাকে তাদের জাতির অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে। কারণ তারা বাংলাদেশি সেনাদের গুরুত্ব স্বীকার করেছে। অনেক দেশে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের এখন বীর হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মোতায়েনের মাধ্যমে জাতির জন্য ২ হাজার কোটিরও বেশি টাকা রেমিট্যান্স এনেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে শান্তি এনে দিয়ে সেসব জাতির জনগণের সম্মান অর্জন করছে। জাতিসংঘের কার্যক্রম এবং বহুজাতিক বাহিনীর প্রতি স্বতন্ত্র অঙ্গীকারের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হয়েছে।

এত সব অর্জন এবং অবদানের মধ্যেও গত ২১ মে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে (ডিডব্লিউ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র‌্যাবকে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাবিউজারস গো অন ইউএন মিশনস’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ডয়েচে ভেলের রিপোর্টের শুরুতে জাতিসংঘ মিশনের জন্য বাংলাদেশের সেনা ও পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কিছু ভিডিও দেখানো হয়। প্রামাণ্যচিত্রে বিতর্কিত মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলীকে বলতে দেখা গেছে, ‘যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে তাদের পাঠানো উচিত না।’ এ ছাড়া প্রতিবেদনের শেষ দিকে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় তামিল বিদ্রোহ দমনের কিছু ছবি দেখিয়ে সে সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত শাভেন্দ্রা সিলভাকে দেশটির সেনাপ্রধান করার কারণে তাদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে স্থগিত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে (অনলাইন সময় নিউজ ২২ মে ২০২৪)। কিন্তু সবাইকে বুঝতে হবে যে শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের অবস্থা নয়। একটি ডকুমেন্টারিতে কীভাবে বলা যেতে পারে- জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সংশ্লিষ্টদের পাঠানো উচিত না। একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবেদনে কিংবা ডকুমেন্টারিতে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত উল্লেখ করার মতো বিষয়টি মানানসই নয়। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় না, ডকুমেন্টারিটি একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় সম্পাদিত হয়েছে! বিষয়টি এসব দিক বিবেচনা করলে পরিষ্কার ধারণা করা যায় যে ডকুমেন্টারিকে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনা পাঠানো বন্ধের বিষয়টি সামনে আনার অপচেষ্টা রয়েছে।

ওপরে উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশ সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করে চলেছে। তাদের বিশ্বব্যাপী প্রশংসা রয়েছে। মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের বীরত্ব ও ত্যাগের ইতিহাসও বেশ লম্বা। এ পর্যন্ত মোট ১৬৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত হয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে।

এতসব ইতিবাচক দিক থাকার পরেও ডয়েচে ভেলে ও নেত্রনিউজ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে সেটি নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে লোক না নেওয়ার ষড়যন্ত্র অনেক আগেই শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ষড়যন্ত্র বিফলে যাওয়ার পর তারা এ ধরনের নেতিবাচক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের নীরব কূটনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

গত বছরের জুনে ডিডব্লিউ র‌্যাবকে নিয়ে আরেকটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে এবং জাতিসংঘের মিশন থেকে এর সদস্যদের বাদ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। এ ছাড়া দোহাভিত্তিক আল-জাজিরার ‘অল প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে তাদের। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাবাহিনীকে নিয়ে কল্পনাপ্রসূত খবর প্রকাশ করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী চিন্তা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের গুণে অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে মানবিক বাংলাদেশ আজ নতুন মর্যাদায় বিশ্বদরবারে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার মানবিক কূটনীতিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্তের সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক সংস্কৃতির বাংলাদেশকে তুলে ধরলে বিষয়টির গুরুত্ব বিশ্ব রাজনীতি ও বাংলাদেশে বেড়ে যায়। শেখ হাসিনা তার ভাষণে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আহ্বান জানিয়েছেন বারবার। তারপরও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে কোনো গণমাধ্যমে প্রশ্ন তোলার বিষয়টিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা যায় নিঃসন্দেহে। বর্তমানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নতুন গুরুত্ব তৈরি হয়েছে। বর্তমান বিশ্বসংকটকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, পরিবেশগত কিংবা সামরিক যেভাবেই আমরা বিবেচনা করি না কেন, সেখানে এশিয়ার দেশগুলোর একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা এশিয়ার অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় আলাদা। এসব কারণেই হয়তো বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়ে বিতর্ক উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী তথা নিরাপত্তা বাহিনীর বিশ্বব্যাপী দীর্ঘদিনের যে সুনাম রয়েছে তা মূলত প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এক ধরনের নতুন ষড়যন্ত্র তৈরি হয়েছে বলে সুস্পষ্টভাবে অনুমান করা যায়।