ব্রেকিং:
হামাসের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত দেশজুড়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর দেশজুড়ে যেসব কার্যালয়-স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর-আগুন ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে প্রতিটি হত্যার বিচার হবে, একটু সময় দিন: সেনাপ্রধান ১১টার মধ্যে শহীদ মিনারে জড়ো হতে বললেন আসিফ মাহমুদ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শহীদ মিনারে স্লোগান দিচ্ছেন রিকশাচালকেরাও শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীতে বাস চাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের গেজেট প্রকাশ পুরো আগস্ট কালো ব্যাচ পরতে হবে শিক্ষক-কর্মচারীদের
  • রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আওয়ামী লীগের রিফাত-ইমরান বিএনপির সাক্কু-কায়সার মুখোমুখি

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২  

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ চাঙাভাব বিরাজ করছে। বড় দুইটি দলের নেতা-নেতৃত্বের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের গ্রুপিংয়ের কারণে নির্বাচনি মাঠে একে অপরের প্রতিপক্ষ হওয়ার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। 

এখানে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত হলেও স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হয়েছেন একই দলের প্রবীণ নেতা প্রয়াত অধ্যক্ষ আফজল খান অ্যাডভোকেটের জ্যেষ্ঠ ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ওরফে ইমরান খান। অপরদিকে, বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণায় অটল থাকলেও দলটির কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও সদ্য সাবেক কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দীন কায়সার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হয়েছেন। এখানে নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের রিফাত ও বিদ্রোহী ইমরান খান এবং বিএনপির সাক্কু ও তার প্রতিপক্ষ কায়সারের মুখোমুখি অবস্থানের বিষয়টি নির্বাচনের মাঠে নয়া মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে এবং এটা দেখার জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন (২৬ মে) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

* আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী: এখানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-নেতৃত্বে রয়েছে বেশ টানাপড়েন, আছে পক্ষ-প্রতিপক্ষ। এখানে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আফজল খান এবং কুমিল্লা সদর আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার—এই দুইটি পক্ষের বিষয় সবার জানা। আফজল খানের মৃত্যুর পর তার মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও জ্যেষ্ঠ ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান এ ধারা ধরে রেখেছেন। কুসিক প্রতিষ্ঠার পর দুইটি নির্বাচন হয়েছে। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আফজল খান এবং ২০১৭ সালের ৩০ মার্চের নির্বাচনে তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা দলের প্রার্থী ছিলেন। ঐ দুইটি নির্বাচনে তারা বিএনপির প্রার্থীর নিকট হেরে যান এবং এজন্য প্রতিপক্ষকে দায়ী করার বিষয়টিও গণমাধ্যমসহ নানাভাবে আলোচিত হয়। ঐ দুটি নির্বাচনে অপর পক্ষের আরফানুল হক রিফাত দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে আরফানুল হক রিফাতকে। তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিনের পক্ষের নেতা। এ অবস্থায় নির্বাচনে ছাড় দিতে চাইছে না প্রতিপক্ষ। এখানে মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হয়েছেন প্রয়াত আফজল খানের জ্যেষ্ঠ ছেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।

স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, আমি বিদ্রোহী প্রার্থী না, স্বতন্ত্র পদে নির্বাচনে মাঠে থাকব। আমার অনেক নেতাকর্মী আছে, তাদের অনুরোধে নির্বাচন করতে হচ্ছে। আমি বিজয়ী হতে পারলে যানজট, জলাবদ্ধতাসহ নাগরিকদের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেব।

নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেন, রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষ থাকবেই, কিন্তু নৌকার প্রশ্নে সবাই একাট্টা। তিনি বলেন, আমার জন্ম কুমিল্লায়, রাজনীতি কুমিল্লায়, বেড়ে ওঠা কুমিল্লায়। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার একজন কর্মী। কুমিল্লার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও নগরবাসী আমাকে চায়। আসন্ন নির্বাচনে আমি নেত্রীকে নৌকার জয় উপহার দেব।

বিএনপির দুই প্রার্থী মুখোমুখি: এখানে বিএনপিতে দীর্ঘ বছর ধরে দুইটি ধারা চলে আসছে। আগে এক পক্ষে ছিলেন প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন এবং অপরপক্ষে জেলা বিএনপির সভাপতি বেগম রাবেয়া চৌধুরী। ২০০৬ সালের ২৬ জুন আকবর হোসেন মারা যান এবং এরই মধ্যে বেগম রাবেয়া চৌধুরীর বয়স হয়েছে, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাকে এখন আর মাঠে দেখা যায় না। ফলে দলটির দুটি ধারার গ্রুপিংয়ের নেতৃত্বেও নামের বদল হয়েছে। এখন এক পক্ষে আছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন এবং আরেক পক্ষে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য নাবেক কুসিক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে মনিরুল হক সাক্কু দলের শীর্ষ পদ (সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক) কিংবা তার অনুসারীরাও গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পাননি। এর পর থেকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। এরপর তিনি ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। দুইটি মেয়াদে তিনি কুমিল্লায় দলের কার্যক্রমে অনুপস্হিত ছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন এবং নিজ দলের প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ তোলা হয়। এ নিয়ে তার সঙ্গে দলের জেলা কমিটির নেতাকর্মীদেরও দূরত্ব বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ২০২১ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় বিএনপির এক সভায় অনুপস্থিত থাকায় মনিরুল হক সাক্কুকে কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে জেলায় তার পদটি এখনো বহাল রয়েছে। এদিকে বিএনপি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এমন ঘোষণা দিলেও মনিরুল হক সাক্কু কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ অবস্থায় সাক্কুকে এবার ছাড় দিতে নারাজ তার প্রতিপক্ষ। এখানে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দীন কায়সার। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনের নিকটাত্মীয় (শ্যালক)।

মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দীন কায়সার বলেন, কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়। পরিবর্তন করতে হলে নৌকা প্রতীক ও সাবেক মেয়রের (সাক্কু) বলয়ের বাইরে থেকে প্রার্থী হতে হবে। তাই আমি প্রার্থী হয়েছি। কুমিল্লার মানুষকে শান্তির ও নিরাপদ কুমিল্লা উপহার দিতে চাই।

বিএনপি নেতা মেয়র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, দুই বার মেয়র ছিলাম, নগরীর উন্নয়নের জন্য সরকার দলের সঙ্গে সমঝোতা করেই কাজ করেছি। প্রতিপক্ষের কাউকে হয়রানি করেছি এমন নজির নেই। নগরবাসী আমাকে আবারও চায়, তাই প্রার্থী হয়েছি। দলীয় মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর দলের কাছে অব্যাহতি চাইব। নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চলছে। আমি নির্বাচনে আছি, থাকব।

এই দুই জনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এখন যারা নির্বাচন করার জন্য মাঠে রয়েছেন, মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিএনপি কথা বলবে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথে দুই কাউন্সিলর: কুসিক নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথে আছেন। তারা হলেন- নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ রায়হান আহমেদ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মঞ্জুর কাদের মণি। এ দুটি ওয়ার্ডে তারা একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ মে) যাচাই-বাছাইয়ে তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর হবেন। কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ রায়হান আহমেদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর মঞ্জুর কাদের মণি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাদের মধ্যে সৈয়দ রায়হান আহমেদ দ্বিতীয় বার ও মঞ্জুর কাদের মণি তৃতীয় বারের মতো কাউন্সিলর হতে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার ১৯ মে মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। ২৬ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও ২৭ মে প্রতীক বরাদ্দ এবং ১৫ জুন এখানে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।