ব্রেকিং:
হামাসের নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত দেশজুড়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর দেশজুড়ে যেসব কার্যালয়-স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর-আগুন ১৬ বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয় এই দিনে প্রতিটি হত্যার বিচার হবে, একটু সময় দিন: সেনাপ্রধান ১১টার মধ্যে শহীদ মিনারে জড়ো হতে বললেন আসিফ মাহমুদ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই ব্যবস্থা আজ থেকে তিন দিনের সাধারণ ছুটি শুরু শহীদ মিনারে স্লোগান দিচ্ছেন রিকশাচালকেরাও শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, গাড়িতে আগুন গণভবনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক বসছে আজ আন্দোলনকারীরা চাইলে এখনই বসতে রাজি: প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালীতে বাস চাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক বন্ধ, সঙ্গে টেলিগ্রামও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের গেজেট প্রকাশ পুরো আগস্ট কালো ব্যাচ পরতে হবে শিক্ষক-কর্মচারীদের
  • রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

২২ বছর ধরে কেন জলে সেতুমন্ত্রীর এলাকার সেতু

নোয়াখালী সমাচার

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২৪  

ফেনীর সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল কাজিরহাটের ছোট ফেনী নদীর রেগুলেটর সেতু (পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যে সেতু)। ২০০২ সালে সেতুটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। একটি সেতুর অভাবে ২২ বছর ধরে দুই উপজেলার ২০ হাজার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
খোদ সেতুমন্ত্রীর বাড়ির এলাকায় নতুন সেতু নির্মিত না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনের সময় কথা হয় দুই পারের বাসিন্দা আছিয়া বেগম ও রাহেলা আক্তারের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের কয়েকবার নৌকায় আসা-যাওয়া করতে হয়। এতে আমাদের ৬০ থেকে ৯০ টাকা খরচের পাশাপাশি সময় অপচয় হয়। ঝড়বৃষ্টি হলে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকে। রাতে এশার নামাজের পর নৌকা চলাচল বন্ধ যায়। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া যায় না।’
সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দুই পারের মানুষের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত সেতু নির্মাণের জন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অবহিত করেছি। তাঁর নির্দেশনা পেয়ে ইতোমধ্যে নোয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতু নির্মাণে উদ্যোগ হয়েছে।’
জানা যায়, জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকা রক্ষা করতে পাকিস্তান সরকার ১৯৬১-৬২ সালে সোনাগাজী উপজেলার কাজিরহাট এলাকায় ছোট ফেনী নদীর ওপর ২০ গেইট বিশিষ্ট একটি রেগুলেটর নির্মাণ করে। রেগুলেটর সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের দায়িত্ব পায় ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ। নির্মাণের পর থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়েছে। স্বাধীনতার পর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে ২০০২ সালে জোয়ারের পানিতে সেতুটি ভেঙে ছোট ফেনী নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, সেতু না থাকায় দুই উপজেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। ২০০ মিটার এই নদীপথে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার মানুষ মাত্র একটি নৌকায় যাতায়াত করেন।
যুবলীগ নেতা মাইন উদ্দিন লিটন ও ইউপি সদস্য খায়রুল ইসলাম টিপন বলেন, ‘২০০২ সালে রেগুলেটরটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সেতুর একপাশে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার কাজীরহাট, দারোগারহাট, কেরামতিয়া বাজার জমাদারবাজার, চানমিয়ার দোকান, ওলামাবাজার রয়েছে। অন্যপাশে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরহাজারী, চরপার্বতি, মৌলভীবাজার, কদমতলা বসুরহাট, চৌধুরীহাটসহ দশটি বাজার রয়েছে। একমাত্র সংযোগ সেতুটি না থাকায় এ এলাকাগুলোর মানুষ কষ্ট করে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। ফলে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।’
সোনাগাজীর কাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন মামুন জানান, উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এটি। রেগুলেটর সেতু না থাকায় প্রতিদিন মানুষ নৌকা দিয়ে পার হচ্ছেন। পারাপারে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন দুই পারের মানুষ। রেগুলেটর থাকাকালে এটির ওপর দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করতো। দ্রুত সেতু নির্মাণ জরুরি।
কোম্পানিগঞ্জের চরপার্বতী গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রব বলেন, ‘প্রতিবার  জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনের সময় দুই উপজেলার এমপিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু ভোটের পর কেউ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর এলাকা হওয়ার পরও দুই উপজেলার মানুষ  সেতুর অভাবে অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।’
কোম্পানীগঞ্জর চরহাজারী ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক আকরাম হোসেন জানান, দুই উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। সেতুর অভাবে উৎপাদিত পণ্য বিপণন করতে সমস্যা হয়। 
সোনাগাজী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন, ‘নতুন সেতু নির্মাণে জরিপ প্রতিবেদন ফেনী জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হলেও সেতুর দৈর্ঘ্য নিয়ে জটিলতায় ফাইলটির অগ্রগতি হয়নি। নতুন সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ৭৫ মিটার পর্যন্ত অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু এই সেতুর ক্ষেত্রে প্রয়োজন ১২০ মিটার। অনুমোদিত আয়তনের বেশি হওয়ায় আমাদের কাছে যে প্রকল্প রয়েছে সেই প্রকল্পে সেতুটি নির্মাণ করা সম্ভব নয়। ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুর জন্য নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
নোয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখাওয়াত আজিজ ভূঁঞা বলেন, ‘সেতুটি দ্রুত নির্মাণে আমরা ইতিমধ্যে জরিপ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কোম্পানীগঞ্জ থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত সড়কটি এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আমরা সেতু নির্মাণের কাজ কাজ শুরু করতে পারব।’
ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল বলেন, ‘সেতু ও সড়ক নির্মাণের বিষয়ে ফিজিবিলিটির কাজ চলছে। ডিজাইন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।’
ফেনীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক ‘সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হতে একটু সময় লাগবে।’